বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে

বিচার বিভাগের নিয়ন্ত্রণ এখন সুপ্রিম কোর্টের হাতে

প্রকাশিত: ১:৩১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫

অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত হলো। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশক ধরে বিচার বিভাগের ওপর যে দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কার্যকর ছিল, তা হাইকোর্টের এক ঐতিহাসিক রায়ে অবসান ঘটল।

 

রায়ে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির হাতে যে কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছিল, তা সংবিধানের মূল কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে ১৯৭২ সালের সংবিধানের মূল ধারাই এখন কার্যকর হবে। এই রায় দেন বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ।

 

রায়ে সরকারকে তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগের পৃথক সচিবালয় গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে ২০১৭ সালে প্রণীত অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি, যা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ন করেছিল।

 

গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ

 

হাইকোর্ট বলেছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মূল কাঠামোর অংশ, যা কোনো আইনের মাধ্যমে খর্ব করা যায় না। সংবিধান সাধারণ আইন নয়; তাই কোনো ধারা অসাংবিধানিক ঘোষণা হলে পূর্ববর্তী বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়।

 

রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি ছিল—১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল হলে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ নষ্ট হবে। তবে আদালতের মতে, প্রকৃতপক্ষে এই অনুচ্ছেদই ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতিকে ক্ষুণ্ন করছিল।

 

পক্ষগুলোর প্রতিক্রিয়া

 

রিটকারী আইনজীবী শিশির মনির বলেন, এই রায়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগের মর্যাদা ও স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। তিনি মনে করেন, রায় বাস্তবায়ন হলে অধস্তন আদালত নির্বাহী বিভাগের চাপ থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃত স্বাধীনতা ভোগ করবে।

 

অন্যদিকে মামলার অ্যামিকাস কিউরি ড. শরীফ ভূঁইয়া বলেন, আদি সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হওয়ায় এখন থেকে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে থাকবে।

 

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

 

১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি, পদোন্নতি ও শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে ছিল। ১৯৭৪ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে তা রাষ্ট্রপতির হাতে যায় এবং পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে’ শব্দ যোগ করা হয়। এই বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১০ জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।

 

হাইকোর্টের সর্বশেষ রায়ে সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে আবারও বিচার বিভাগের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত করা হলো।