কক্সবাজার উপকূলে ইলিশের সংকট, বিপাকে হাজারো জেলে বাংলার ডাক বাংলার ডাক প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫ কক্সবাজার উপকূলে চলতি মৌসুমে ইলিশ ধরা প্রায় নেই বললেই চলে। জেলেদের দাবি, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন নিম্নচাপ সৃষ্টি, পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়া এবং গভীর সমুদ্রের দেশি–বিদেশি ট্রলারের নির্বিচার মাছ শিকারের কারণে এই সংকট দেখা দিয়েছে। এতে প্রায় ৭০ শতাংশ জেলে পরিবারে এক বেলা খাবার জোটাতেও কষ্ট হচ্ছে। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, অন্তত সাত শতাধিক ট্রলার নদীতে নোঙর করা। জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নুর হাসান, আবু তৈয়ুব মাঝি, মো. শফি ও আবদুল কাইয়ুম মাঝি নামের কয়েকজন জেলে জানান, একসময় জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ত। সেই ইলিশ বিক্রির টাকায় সংসার ও সন্তানদের পড়াশোনা চলত। এখন ইলিশ না পাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সীমিত ট্রলারে মিলছে অল্প ইলিশ শহরের নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে সেদিন ছয়–সাতটি ট্রলার ভিড়েছিল। তবে এর মধ্যে মাত্র দুটি ট্রলারে ৭০ থেকে ১৩০টি ইলিশ ধরা পড়ে। প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হয় ২,৩০০ টাকায়, আর খুচরা বাজারে তা ২,৫০০ থেকে ২,৮০০ টাকার মধ্যে। গবেষকদের মতামত গবেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে বৃষ্টির ধরণ বদলে গেছে। ঘন ঘন নিম্নচাপ সৃষ্টি হলেও বৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে সাগরে ইলিশের আগমন কমে গেছে। স্থানীয় জেলে মো. শফি জানান, আড়াই বছর আগে তাঁর ট্রলারে এক ট্রিপে ২৫ লাখ টাকার ইলিশ ধরা পড়েছিল। এরপর আর কখনো তিন লাখ টাকার বেশি মাছ ওঠেনি। ট্রলারের আরেক মাঝি সজীবুল ইসলাম বলেন, “১৪ বছর ধরে মাছ ধরছি, কিন্তু এমন পরিস্থিতি দেখিনি। এবছর আগস্টেই অন্তত ছয়বার নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে, তবে সাগরে বৃষ্টির দেখা নেই।” জেলেপল্লিতে হাহাকার জেলে নুর হাসান জানান, তিন মাসে অন্তত দশবার সাগরে গিয়েও প্রত্যাশিত মাছ পাননি। একেকবার যাত্রায় জ্বালানি ও খাবার খরচ হয় প্রায় চার লাখ টাকা, অথচ মাছ বিক্রি করে পাওয়া যায় এক লাখ টাকার মতো। এতে জেলে পরিবারগুলো দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। ইলিশ আহরণে ধস কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ আহরণ ক্রমেই কমছে। ২০২২–২৩ অর্থবছর: ৩,৯৭৫ মেট্রিক টন ২০২৩–২৪ অর্থবছর: ২,৫৫৬ মেট্রিক টন ২০২৪–২৫ অর্থবছর: ১,৬২৮ মেট্রিক টন ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে। মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এ কারণে সরকারের রাজস্ব আদায়ও কমছে। সমাধানে কী দরকার? কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, জেলার প্রায় পাঁচ হাজার ট্রলার ও ১ লাখ ২০ হাজার জেলে মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মাছ না পাওয়া তাঁদের বিপদে ফেলছে। তাঁর মতে, বঙ্গোপসাগরে ইলিশ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান ও গবেষণা এখন জরুরি। এদিকে জেলেরা বলছেন, গভীর সমুদ্রে দেশি–বিদেশি ট্রলারের আধিক্য, নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও বেহেন্দি জালের ব্যবহার বন্ধ না করলে ইলিশ আহরণ আরও হ্রাস পাবে। SHARES প্রচ্ছদ বিষয়: